গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত অফিস করছেন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিপিপি পেকুয়ার টিম লিডার এম মঞ্জুর আলম। জানা যায়, পেকুয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণার ১০ বছর পরেও সরানো হয়নি সদর ইউনিয়ন পরিষদের পুরোনো ভবনটি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে অনায়াসে। আর ধসে পড়লেই পাশের ব্যস্ততম সড়কের পথচারী, যাত্রী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থানরত লোকজনের প্রাণহানি ঘটার আশংকা রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অতীতে বিভিন্ন সময় ভবনের ছাদ ধসে আহত হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই ভবনটিতে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) পেকুয়া সদর ইউনিয়ন কার্যালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। রয়েছে গ্রাম পুলিশদের বিশ্রামাগার ও ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম। এমনকি ইউপি কার্যালয়ের ভিজিডি, ভিজিএফ কার্যক্রম পরিচালিত হয় ওই ভবনের নিচতলা থেকে।
বিগত ২৩ বছর ধরে ভবনটিতে নিয়মিত অফিস করছেন সিপিপি’র পেকুয়া সদর ইউনিয়নের টিম লিডার এম মঞ্জুর আলম। তিনি বলেন, কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে দৈন্দনিন কাজে ভবনটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুকে এক প্রকার কবুল করে অফিসে আসি। এ ভবনের নিচে জনসাধারণকে না বসার জন্য ইতিমধ্যে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২০১৩ সালের ২৬ জুন রাত আটটার দিকে এ ভবনের দোতলার ছাদের একাংশ ধসে পড়লে তিনজন আহত হন। ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। তাই ভবনের নিচে জনসাধারণের অবস্থানের ওপর নিষেধজ্ঞা রয়েছে।
সত্তর দশকের শুরুর দিকে পেকুয়া বাজারে স্থাপিত দোতলা ভবনটি ২০০৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ১০ বছরেও তা সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া বাজার ঘেঁষেই পরিত্যক্ত ভবনটির অবস্থান। ভবনের দোতলায় ছাদ বলতে শুধু মরিচা ধরা লোহার রডই আছে। বাকি সব নিচে খসে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে সব দরজা-জানালা। পুরো ভবনের দেয়াল ও ছাদে সৃষ্ট ফাটল চোখে পড়ার মতো। দেয়ালে জন্মানো পরগাছা আস্ত গাছে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। অন্ধকার ও ভবনের নাজুক অবস্থার কারণে ভেতরে ঢুকতেই ভয়ে গা শিউরে উঠে, এই বুঝি ধসে পড়লো ভবন।
পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকতার আহমদ বলেন, পরিত্যক্ত ভবনটি ঘেঁষেই পেকুয়ার প্রধান বাজার। ওই ভবনটি সরিয়ে নিতে অনেকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ভবনটি ধসে পড়লে নিশ্চিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে। এ কারণে ভবনের আশপাশের ব্যবসায়ীরা সবসময় আতঙ্কে থাকেন।
এ ব্যাপারে পেকুয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ বলেন, ঝুঁকিপুর্ণ ভবনটি সরানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে অনেকবার চিঠি দিলেও কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি আরো জানান, সাবেক চেয়ারম্যানও ভবনটি সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাযালয় সুত্রে জানা গেছে, ভবনটি সরানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এত দিন সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
পাঠকের মতামত: